বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ টি-ব্যাগে অনুমোদিত সীমার চেয়ে বহু গুণ বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা এসডো (ESDO)-এর সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে এসডোর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে “Brewing Toxins: Exposing the Heavy Metal Hazard in Tea Bags and Dried Loose Tea” শীর্ষক এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় বাজার থেকে সংগৃহীত ১৩টি নমুনার মধ্যে ১২টি টি-ব্যাগ এবং ১টি খোলা চা পাতা বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, বেশিরভাগ টি-ব্যাগের মোড়কে ক্রোমিয়াম, সীসা, পারদ ও আর্সেনিক-এর মতো বিষাক্ত ধাতু অনুমোদিত সীমার চেয়ে বহু গুণ বেশি মাত্রায় বিদ্যমান।
📌 গবেষণায় পাওয়া ধাতুগুলোর মাত্রা (সর্বোচ্চ):
-
ক্রোমিয়াম (Cr): ১,৬৯০ পিপিএম (নিরাপদ সীমা: ৫ পিপিএম)
-
সীসা (Pb): ৫১ পিপিএম (সীমা: ৫ পিপিএম)
-
পারদ (Hg): ১০৮ পিপিএম (সীমা: ০.৩ পিপিএম)
-
আর্সেনিক (As): ১৪ পিপিএম (সীমা: ২ পিপিএম)
-
অ্যান্টিমনি (Sb): ১৫৪ পিপিএম
গবেষণায় সামান্য মাত্রায় ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম শনাক্ত হলেও চা পাতায় আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, জিঙ্ক ও কোবাল্ট-এর মতো উপকারী খনিজও পাওয়া গেছে।
🔍 জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি ও কর্তৃপক্ষের মতামত
এসডোর চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ একে “ভোক্তা অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন” হিসেবে আখ্যায়িত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, “চায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে তা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে।”
এ বিষয়ে চা বোর্ড, বিএসটিআই ও পরিবেশ অধিদপ্তির কর্মকর্তারা গবেষণাকে “গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা” হিসেবে অভিহিত করে ভবিষ্যতে যৌথ গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ধাতব উপাদান শনাক্তে X-Ray Fluorescence (XRF) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
📊 ভোক্তা জরিপ:
গবেষণার সঙ্গে একযোগে চালানো জরিপে দেখা যায়, দেশের ৫৫% মানুষ প্রতিদিন ২–৩ কাপ এবং ২৭% মানুষ ৪ বা ততোধিক কাপ চা পান করেন। তবে মাত্র ১% ভোক্তা জানেন যে টি-ব্যাগে ক্ষতিকর ধাতু থাকতে পারে।
📣 গবেষকদের বার্তা:
ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “এটি দোষারোপের জন্য নয়, বরং সমন্বিতভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য একটি পদক্ষেপ।”
চা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হলেও, টি-ব্যাগের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের জন্য অজান্তেই তৈরি হচ্ছে গুরুতর হুমকি। গবেষণাটি ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কসংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment