আজ ৩ নভেম্বর, জেল হত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
জাতীয় এই চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। প্রতি বছরের মতো আজও শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে জাতীয় চার নেতাকে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এ জাতীয় চার নেতা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে এ সরকার গঠিত হয় ও শপথগ্রহণ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামান।
এ সরকারের নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। তাদের দক্ষ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয়, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সংগঠিত করতে সব আন্দোলন-সংগ্রামেও এ চার নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তাঁর ঘনিষ্ঠ এই চার সহকর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এর কিছু দিন পরই ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তারা।এই হত্যার ঘটনায় করা মামলা জেলহত্যা মামলা নামে পরিচিতি পায়।
এই চার নেতাকে হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
বিচারিক আদালত রায়ে রিসালদার মোসলেম উদ্দিন (পলাতক), দফাদার মারফত আলী শাহ (পলাতক) ও এল ডি (দফাদার) আবুল হাসেম মৃধাকে (পলাতক) মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়া সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

No comments:
Post a Comment