ফতেপুর ইউনিয়নের গৃহকর্মী শিশুটিকে খুন্তির ছ্যাঁকা, বুকে লাথি-প্লাস দিয়ে চুল তুলতেন গৃহকর্ত্রী - Jashore Tribune

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

a1

Thursday, May 27, 2021

ফতেপুর ইউনিয়নের গৃহকর্মী শিশুটিকে খুন্তির ছ্যাঁকা, বুকে লাথি-প্লাস দিয়ে চুল তুলতেন গৃহকর্ত্রী

 


তিন বেলা খাওয়া, ভালো থাকার আসায় প্রতিবেশীর গৃহকর্মী হয়ে ঢাকা গেলেও শরীরে নির্যাতনের দগদগে ঘা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হলো আমেনাকে। মাসের পর মাস নির্যাতিত হলেও মেলেনি চিকিৎসা। নির্যাতনের খবর পেয়ে শেষপর্যন্ত নানী গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। ১৩ বছরের এ শিশুটি তিনদিন চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরেছে। গত ২৫ মে ঢাকা থেকে আনার পর ওইদিনই তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ভায়না রাজাপুরের মৃত নুর ইসলামের স্ত্রী আকলিমা বেগম জানান, প্রতিবেশী বাদল শিকদার ও তার স্ত্রী শ্যামলী চাকরির সুবাদে ঢাকায় বসবাস করেন। চেয়েছিলাম এতিম মেয়েটি, তিন বেলা ভালো-মন্দ খেয়ে মানুষ হবে। ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে। বয়স হলে বিয়ে দেব, তার ঘর-সংসার হবে। কিন্তু ওই বাড়ির লোকেরা খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে ঝলসে দিয়েছে হাত, পিঠ ও উরুসহ শরীরের অসংখ্য জায়গা। তিনি বলেন, কোনো মানুষ এভাবে একটি বাচ্চা মেয়েকে নির্যাতন করতে পারে- একথা চিন্তাও করতে পারছি না।

নির্যাতনের শিকার আমেনা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, বাদল তার স্ত্রী শ্যামলীকে নিয়ে ঢাকায় মহাখালীতে সাততলা ফ্লাটে থাকে। তাদের ছোট একটি ছেলেকে দেখাশোনা করতে গ্রাম থেকে আমাকে নিয়ে যায়। শ্যামলী খারাপ মানুষ। সব সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতেই থাকে। আমাকে দিয়ে সংসারের সব কাজ করায়। মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লে সেদিন আমাকে আর খেতে দিত না। নোংরা ভাষায় গালি দিতো, শুরু করতো নির্যাতন। কখনও গরম তেলের খুন্তি চুবিয়ে আবার কখনো চুলায় খুন্তি গরম করে আমার শরীরের সব জায়গায় ছ্যাঁকা দিয়েছে। হাত, পিঠ, পেটে কালশিটে দাগ হয়ে গেছে। বাদল আমার পা ধরে টেনে ধরতো। শ্যামলী আমার বুকের ওপর উঠে পাড়াতো।

লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মেয়েটি বলে, শ্যামলী প্লাস দিয়ে টেনে আমার মাথার চুল তুলে ফেলেছে অনেকবার। নির্যাতনে ঢাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় পরশুদিন আমার নানী ঢাকায় যেয়ে আমাকে যশোরে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে।

যে বাসায় আমেনা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো, সেই বাদল শিকদার অবশ্য মেয়েটির ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তার ভাষ্য, মেয়েটা ভালো না। ঘরের সব কিছু চুরি করে খেত। ঘর থেকে টাকা চুরি করত। বাদল আরও বলেন, কীভাবে ওর (আমেনার) শরীর ঝলসে গেছে সেটা আমার জানা নেই।

আরেক প্রশ্নে বাদলের জবাব তিনি বলেন, স্থানীয় মেম্বার দায়িত্ব নিয়ে আমেনার পরিবারের সাথে কথা বলে বিষয়টি মিটিয়ে দেবেন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার আহমেদ তারেক শামস বলেন, আমেনা নামে ১৩ বছরের একটি শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের অনেক চিহ্ন রয়েছে। তবে সে এখন শঙ্কামুক্ত।

জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমাদের থানার মধ্যে নয়। আমি ভিকটিমের পরিবারকে থানায় আসতে বলেছি। আমরা সংশ্লিষ্ট থানাকে বিষয়টি জানাবো।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad